সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে স্বকীয়তা হারাচ্ছে জাতি

প্রকাশঃ জুলাই ১৬, ২০১৭ সময়ঃ ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

আফজাল হোসাইন মিয়াজী:

বলা হয় যে, সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির আয়না স্বরুপ। আয়নার কাজ কি? আয়নার কাজ হল হুবহু ব্যক্তির অবয়বকে তার সামনে উপস্থাপন করা। লুকানো অথবা অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা নয়।সংস্কৃতিকে নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। কারণ সংস্কৃতির বলয় ব্যপক ও জীবনময়।

সংস্কৃতি বলতে বোঝায়, একটা জাতির দীর্ঘদিনের জীবনাচরণের ভেতর দিয়ে যে মানবিক মূল্যবোধ সুন্দরের পথে কল্যাণের পথে এগিয়ে চলে তাই সংস্কৃতি। বিভিন্ন আচার-প্রথা, নিয়ম কানুন, বিশ্বাস সব কিছুই সংস্কৃতির অন্তর্ভূক্ত। একটি জাতির সংস্কৃতি বলতে সামগ্রিকভাবে অবশ্যই তার অস্তিত্ব ঐ জাতির সত্ত্বার মধ্যে থাকতে হবে। আমাদের সংস্কৃতির দিকে তাকালে আমরা কি আমাদের নিজস্বতা খুঁজে পাব?

মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে, মহৎভাবে বাঁচা।’ তাই সমাজ জীবনে সংস্কৃতির গুরুত্ব অত্যধিক।কিন্তু আমাদের দেশে সংস্কৃতি মানেই যেন বিদেশি বিনোদনের অন্ধ অনুকরণ। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, বিনোদন সংস্কৃতির মূল লক্ষ্য নয়, উপলক্ষ মাত্র। সুস্থ বিনোদন সবার কাছেই গ্রহণীয় এবং প্রশংসনীয়।

মানবতার ধর্ম ইসলামও সুস্থ সংস্কৃতি ও বিনোদনকে সমর্থন ও উৎসাহ প্রদান করে। অনেকেই মনে করেন, ইসলামে বিনোদনের কোনো সুযোগ নেই। ইসলামের গন্ডিতে থাকা মানেই রসহীন জীবনযাপন করা। তাই চিত্তবিনোদনের জন্য ইসলামের চাদর গা থেকে খুলে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এমন ধারণা যাদের, তাদের জ্ঞানের পরিধি সংকীর্ণ। তাদের ধারণা সম্পূর্ণই ভুল।

শিক্ষণীয় বিনোদনের জন্য ভ্রমণ অত্যন্ত ফলপ্রসূ। আল্লাহ তায়ালা ভ্রমণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বলুন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো, কীভাবে তিনি সৃষ্টি কর্ম শুরু করেছেন।’ (সূরা আনকাবুত : ২০)। বিনোদনের জন্য রাসুল (সা.) সাহাবিদের উৎসাহ দিতেন। তাদের থেকে কোরআন তেলাওয়াত, কবিতা ও বক্তৃতা শুনতেন। শরীরচর্চার তাগিদ দিতেন।

বিনোদনের অজুহাতে নগ্নতার মাতাল নেশায় আচ্ছন্ন তরুণ প্রজন্ম। বাদ নেই আবালবৃদ্ধবনিতাও। আর এর মূলে রয়েছে আকাশ সংস্কৃতির সহজলভ্যতা। বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানীদের অন্যতম বিস্ময়কর অবদান হচ্ছে আকাশ সংস্কৃতি।

এ আকাশ সংস্কৃতির যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি এর অপকারেরও শেষ নেই। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অপব্যবহারে পুরো পৃথিবী আজ নিমজ্জিত। চিত্তবিনোদনের শিরোনামে লাগামহীন উগ্র আয়োজনের নিকষ অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। এর বিষক্রিয়া থেকে বেঁচে নেই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের লাল সবুজের বাংলাদেশও।

ওরা ওদের বস্তাপচা সংস্কৃতি আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আমাদের আগামীর প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা হারাচ্ছি আমাদের স্বকীয়তা। আমাদের মেয়েরা যখন হাসে তখন কোয়েল মল্লিকের মত হাসে। তাদের কান্না শ্রাবন্তীর মত। তাদের জেদ মিমির মত!

আমাদের ছেলেরা কাটিংয়ে দেব, চলায় জিৎ! স্টাইলে সোহম!
চলবে…..

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G